দেশে বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। সরকারি ও বেসরকারি নানা সেবা এখন ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়। এসব সেবা পেতে প্রয়োজনীয় ফরম পূরণের কাজও এখন সহজে অনলাইনে সেরে নেওয়া যায়। বাংলাদেশে অনলাইনে ভর্তির আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৯ সালে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজেও এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়। এখন তো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজও হয় অনলাইনে। নানা সরকারি-বেসরকারি কাজের ফরমও পূরণ করা যায় ওয়েবসাইটে।
২০১৭ সালে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সহযোগিতায় একটি সমীক্ষা চালায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বা এটুআই। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অনলাইনে ভর্তির আবেদন করেন, তাদের খরচ ৭৫ শতাংশ কম হয়। সাধারণ প্রক্রিয়ার চেয়ে অনলাইনে সময়ও কম লাগে ৮০ শতাংশ। অর্থ, সময় এবং আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে এসব সুবিধার পাশাপাশি নানা ভোগান্তি থেকেও রক্ষা পান শিক্ষার্থীরা।
অনলাইন ফরম পূরণের সুবিধা হলো, দেশের যে প্রান্তেই থাকুন, ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে যেকোনো সময় বা পরিস্থিতিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ফোনেও কাজ সারা যায়। একাধিক প্রতিষ্ঠানের সামনে লাইন ধরতে হয় না। অনলাইন ফরমপূরণ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে গতিশীল করেছে। মানুষের শারীরিক কষ্ট কমে গেছে। অনলাইনে ফরম পূরণের মত বিষয়গুলো এমন পরিবর্তন এনেছে দেশে। প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলোকে যদি আরো সুষ্ঠু এবং সংগঠিতভাবে করা যায়, তাহলে অনলাইন ফরম পূরণ নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ।
পাওয়া যায় সরকারি-বেসরকারি সেবা
এখন শুধু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে নয়, সরকারি ও বেসরকারি নানা সেবা ও উদ্যোগের ফরম অনলাইনে পূরণ করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন টিন সনদ, পাসপোর্ট আবেদন, সঞ্চয়পত্রের ফরমের মত নানা দরকারি ফরম। সরকারি নানা ফরম নিয়ে বেশ আগেই সরকারের ই-সিটিজেন সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ধরনের ফরম অনলাইনে যুক্ত করা হয়েছে। ইউএনডিপির সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত ভড়ত্সং.মড়া.নফ ঠিকানার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন থেকে সরাসরি এসব ফরম দেখা ও নামানো যায়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দেওয়া ফরমগুলো পিডিএফ এবং ওয়ার্ড ডকুমেন্ট—দুভাবেই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ফরম নামের ওই ওয়েব পোর্টালের স্লোগান হচ্ছে, ‘সকল ফরম এক ঠিকানায়’। সাইটটিতে ১ হাজার ৬৮০ রকম ফরম পাবেন।
এক ঠিকানায় সব ফরম
বাংলাদেশ ফরম সাইটটিতে ধরন অনুযায়ী অর্থ ও ব্যাংকসংক্রান্ত ফরম সংখ্যা ৫২, আইনশৃঙ্খলা ও আদালতসংক্রান্ত ১০৬টি, কৃষি ও সার নিয়ে ৬০টি, চাকরিসংক্রান্ত ১৮৫টি, তথ্যডাক ও টেলিযোগাযোগ-সংক্রান্ত ৫০টি, নিবন্ধনসংক্রান্ত ৫৭টি, পরিবহন ও যোগাযোগসংক্রান্ত ২৪টি, পরিবেশ ও বন নিয়ে ২২টি, পুরস্কার প্রাপ্তির আবেদন ১১টি, প্রতিবেদন ২০টি, ভূমিসংক্রান্ত ২৮টি, মত্স্য ও প্রাণিসংক্রান্ত ১২টি, লাইসেন্সসংক্রান্ত ৫৯টি, শিক্ষা বোর্ড ১৯৩টি, শিক্ষাসংক্রান্ত ১৪৫টি, শিল্প ও বাণিজ্য ৭৬টি, সিটি করপোরেশন ২৮২টি, স্থানীয় সরকার ৩৪টি, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ৪৪টি এবং অভিযোগ ও পরামর্শসংক্রান্ত ২১৮টি ফরম রয়েছে।
এর বাইরে দপ্তর অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন কাজের ফরম পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম এখানে দেওয়া আছে। এর বাইরে সব ফরমের মধ্যে পাসপোর্ট, ভিসা, নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আয়কর রিটার্ন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, টেলিফোন, গ্যাসসংযোগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা রকম ফরম এ বিভাগে পাওয়া যাবে। ফরম নামাতে প্রথমে নির্ধারিত ফরমের নামের ওপর ক্লিক করতে হবে। এরপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় দেওয়া ওই ফরমের পিডিএফ বা ওয়ার্ড ফরমেটে মুদ্রণ ও পূরণযোগ্য ফরম নামানো যাবে। ওয়েবসাইটটিতে ফরম পূরণ করে কিছু নমুনাও রাখা হয়েছে। সাইটটিতে জনপ্রিয় ফরম নামে একটি বিভাগে সব ধরনের জনপ্রিয় ফরম রাখা হয়েছে।